‘ট্যালেন্ট’, ‘এফোর্টলস’- দীর্ঘ পেশাদার কেরিয়ারে নিশ্চিতভাবে কয়েক কোটি বার সেই শব্দগুলো শুনতে হয়েছে রজার ফেডেরারকে। কিন্তু সেগুলিকে নেহাতই 'মিথ' বলে মনে করেন সুইৎজারল্যান্ডের মহাতারকা। তাঁর মতে, সবকিছুর জন্য লড়াই করতে হয়। জীবনে অনায়াসেই কোনও কিছু অর্জন করা যায় না। ওটা নেহাতই একটা ‘মিথ’। হতে পারে কোনও খেলোয়াড়কে প্রতিভাবান মনে হয়। কিন্তু যতক্ষণ না নিজের সেরাটা উজাড় করে দেবেন কেউ, কঠোর পরিশ্রম করবেন ততক্ষণ তিনি নিজের সেটা জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন না।
গত রবিবার আমেরিকার ডার্থমাউথ কলেজের সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি গ্রহণ করার সময় ফেডেরার সেই মন্তব্য করেন। আর তাঁর ভাষণের সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। নেটিজেনদের মতে, সাম্মানিক ডক্টরেটের ডিগ্রিটা একদম ঠিক মানুষকেই দেওয়া হয়েছে। যিনি টেনিস দুনিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে জীবনের শিক্ষা দিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন: Mohun Bagan new head coach: ATK-র প্রাক্তনীকে হেড কোচ করল মোহনবাগান! দায়িত্বে থাকছেন না হাবাস
তিনি বলেন, ‘অনায়াসে কিছু হয় না। এটা নেহাতই একটা মিথ। আমি সত্যি বলছি। আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে সেই মন্তব্য করছি, যে নিজের জীবনে সেই শব্দটা অসংখ্যবার শুনেছে। লোকজন বলতেন যে আমার খেলা এফোর্টলেস ছিল। অধিকাংশ সময় তাঁরা সেই শব্দটা প্রশংসার জন্য ব্যবহার করতেন। কিন্তু লোকজন যখন বলতেন যে ওকে কার্যত ঘাম ঝরাতে হয়নি, তখন আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম। বা (যখন কেউ বলতেন যে) ও আদৌও কিছু চেষ্টা করছে?’
টেনিস জগতের অন্যতম সেরা ধ্রুপদী খেলোয়াড় আরও বলেন, 'বাস্তবটা হল যে বিষয়টাকে সহজ করে তোলার জন্য আমায় (বছরের পর বছর ধরে) কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। নিজের মাথা কীভাবে ঠান্ডা রাখতে হয়, সেটা শেখার আগে বছরের পর বছর ধরে আমি আমার নিজের হতাশা প্রকাশ করেছি, ক্রুদ্ধ হয়েছি, নিজের র্যাকেট ভেঙেছি।'
সেইসঙ্গে তিনি জানান, মাথা ঠান্ডা রেখে যে খেলতে হবে, তা নিজের কেরিয়ারের গোড়ার দিকেই উপলব্ধি করেছিলেন। তাঁর ‘ঘুম’-টা ভাঙিয়ে দিয়েছিলেন এক প্রতিপক্ষ। যিনি বলেছিলেন যে ‘রজার, তুমি প্রথম দু'ঘণ্টা ফেভারিট। কিন্তু তারপর আমি ফেভারিট হয়ে যাব।’ প্রাথমিকভাবে অবশ্য সেই কথার অর্থ বুঝতে পারেননি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন ফেডেরার। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দুটি লাইনের অন্তর্নিহিত অর্থটা বুঝতে পেরেছিলেন বলে জানান টেনিস জগতের ‘শিল্পী’।
ফেডেরার জানান, টেনিসে নিখুঁত বলে কিছু হয় না। তিনি দীর্ঘদিন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় থেকেছেন। দীর্ঘদিন থেকেছেন ‘বিগ থ্রি’-তে। তারপরও সিঙ্গলসে নিজের ৪৬ শতাংশ পয়েন্টে হেরে গিয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে বিবেচনা করতে গেলে দুটি পয়েন্টে পরপর জিততে পারেননি। একটি জিতেছেন, তো পরেরটিতে হেরে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘টেনিসে পারফেকশন (নিখুঁত বা পরিপূর্ণতা) অর্জন করা অসম্ভব। আমি কেরিয়ারে যে ১,৫২৬টি সিঙ্গলস ম্যাচ খেলেছি, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যাচে জিতেছি। এবার আমি আপনাদের একটা প্রশ্ন করতে চাই। ওই ম্যাচগুলিতে আমি কত শতাংশ পয়েন্ট জিতেছি বলে আপনারা মনে করেন? মাত্র ৫৪ শতাংশ। অন্যভাবে বলতে গেলে র্যাঙ্কিংয়ের উপরের দিকে থাকা টেনিস খেলোয়াড়রাও অর্ধেক পয়েন্ট জেতেন। যখন আপনি গড়ে প্রতি দ্বিতীয় পয়েন্টেই হেরে যান, তাহলে প্রতিটি শট নিয়ে মাথা না ঘামানোর বিষয়টি রপ্ত করে ফেলবেন।’
2024-06-11T17:42:31Z