EDEN GARDENS: সিএবি-র বৈঠকে ঝড়, ক্রিকেটারদের শাস্তি ঘোষণা হল না, 'ঊর্ধ্বতন কর্তা'র নির্দেশ নিয়ে তোলপাড়

কলকাতা: আলোচ্যসূচিতে ছিল, ইডেনে (Eden Gardens) স্থানীয় ক্রিকেটের প্রথম ডিভিশন লিগের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল বনাম ভবানীপুরের (East Bengal vs Bhawanipur) ম্যাচে বেনজির অশান্তির মামীংসা। সোমবার সন্ধ্যায় সেই বৈঠকেই ঝড় উঠল সিএবি-তে। একের পর এক প্রশ্নবাণ সামলাতে হল কর্তাদের। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটারদের শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে বটে, তবে এখনই তা প্রকাশ করা হল না বেনজির পরিস্থিতিতে। পাশাপাশি ক্লাবগুলিকে শাস্তি দেওয়ার মতো কড়া পদক্ষেপের রাস্তায় যে হাঁটা হবে না, পরিষ্কার হয়ে গেল সোম-সন্ধ্যার বৈঠকে।

ইডেনে লিগ ফাইনালে ভবানীপুর ক্লাবের শাকির হাবিব গাঁধীর আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অভিযোগ ছিল, আম্পায়ার আউট দেওয়ার পরে ব্যাটার মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। পরে স্কোয়্যার লেগ আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যাটারকে ফিরিয়ে নেন মাঠের আম্পায়ার। জানা যায়, শাকিরের ক্যাচ স্লিপ ফিল্ডার পরিচ্ছন্নভাবে ধরেননি। তবে যেভাবে ব্যাটার মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়, তা নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে লাল-হলুদ শিবির। পাঁচদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিন খেলা বন্ধ থাকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ম্যাচ শুরু হয়। তবে ভবানীপুর শিবিরের অভিযোগ, পরের দিনও ইচ্ছাকৃতভাবে সময় নষ্ট করেন ইস্টবেঙ্গলের ক্রিকেটারেরা। সেদিন এক ঘণ্টায় মাত্র ৩ ওভার বল করে ইস্টবেঙ্গল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দুই দলের একটি করে ইনিংসও শেষ হয় না বলে যুগ্মজয়ী ঘোষণা করা হয় দুই ক্লাবকে। যদিও ম্যাচের পঞ্চম দিন বচসা ও হাতাহাতিতে জড়ান দুই দলের ক্রিকেটার ও কর্মকর্তারা। কলঙ্কিত হয় বঙ্গ ক্রিকেট।

যা নিয়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঠিক করতে শনিবার টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। যদিও সেই কমিটির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, সিএবির গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সিনিয়র টুর্নামেন্ট কমিটিতে রাখা হয়েছে পাঁচের বদলে ছয় সদস্যকে! শনিবারের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে বল ঠেলা হয়েছিল এপেক্স কাউন্সিলে।

সোমবার এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয় যে, সিএবি-র আচরণবিধি (লেভেল থ্রি) ভাঙায় সূরয সিন্ধু জয়সওয়ালকে ৬ ম্যাচ ও বাকি তিন ক্রিকেটার - ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়, আকাশ ঘটক ও শাকির হাবিব গাঁধীকে ৪টি করে ম্যাচ নির্বাসিত করা হবে। যদিও সেই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি এদিন।

কেন?

কারণ, সিএবি-র গঠনতন্ত্র। যেখানে ২৬ নম্বর নিয়মে সাফ বলা আছে, মাঠে এ ধরনের অশান্তি হলে ব্যবস্থা নেবে টুর্নামেন্ট কমিটি। শাস্তি হলে সেটাও ঘোষণা করার দায়িত্ব টুর্নামেন্ট কমিটিরই। ক্রিকেটারেরা সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে (ছুটির দিন ছাড়া) তা করতে হবে এপেক্স কাউন্সিলের কাছে। এবং সেই আবেদনপত্র জমা দিতে হবে সিএবি সচিবের কাছে।

সোমবারের বৈঠকে ক্রিকেটারদের শাস্তি ঘোষণার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন কেউ কেউ। তবে সিএবি-র এপেক্স কাউন্সিলের সদস্য মহাদেব চক্রবর্তী তার বিরোধিতা করেন বলেই খবর। সিএবি সচিব নরেশ ওঝাকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, নিয়ম ভেঙে এপেক্স কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত টুর্নামেন্ট কমিটিরই। এপেক্স কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে খানিকটা হাইকোর্টের রায়দানের মতো। শাস্তিপ্রাপ্ত ক্রিকেটারেরা সেক্ষেত্রে টুর্নামেন্ট কমিটির মতো 'লোয়ার কোর্টে' পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন কীভাবে?

শোনা গেল, সেই বক্তব্য মেনে নেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই সোমবার বৈঠক শেষে কোনও সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেননি সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। সিএবি নির্বাচনের আবহে ক্লাবগুলিকে শাস্তি দেওয়ার পথেও হাঁটা হচ্ছে না বলেই খবর।

বৈঠকে আলোচনা হল লিগ ফাইনাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আম্পায়ার ও অবজার্ভারদের রিপোর্ট নিয়েও। যে রিপোর্টে রয়েছে বিস্ফোরক তথ্য! জানা গেল, সেই রিপোর্টে অবজার্ভার ও আম্পায়াররা সাফ জানিয়েছেন যে, নষ্ট হওয়া সময় পূরণ করতে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ শেষের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩০ মিনিট করে বেশি খেলা করার কথা বলেন তাঁরা। নৈশালোকে দিন-রাতের ম্যাচ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল রাত আটটা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা বাড়িয়ে সাড়ে আটটা করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বাড়তি সময় খেলা নিয়ে বেঁকে বসে। বারবার আলোচনার পর 'সিএবির এক ঊর্ধ্বতন কর্তা'র নির্দেশে খেলা সেদিনের মতো সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে।

এখানেই গুরুতর প্রশ্ন। সেই 'ঊর্ধ্বতন কর্তা'র পরিচয় কী? কী করেই বা তিনি এই ধরনের নির্দেশ দিতে পারেন?

সোমবারের বৈঠকে আম্পায়ারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, লিখিত রিপোর্টে উল্লেখ করা সেই 'ঊর্ধ্বতন কর্তা' কে? জানা গেল, এক আম্পায়ার সেই নাম বলে দিয়েছেন। শোনা গেল, আম্পায়ার কমিটির চেয়ারম্যানের নাম করা হয়েছে। যিনি আম্পায়ার পোস্টিং থেকে শুরু করে পুরো বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত। যা জানাজানি হতেই কেউ কেউ বলছেন, সর্ষের মধ্যেই ভূত? ম্যাচের ফয়সালা যাতে না হয়, সে ব্যাপারে নাকি সিএবি-র বিভিন্ন মহল থেকেও চাপ ছিল বলে অভিযোগ করেছে ভবানীপুর ক্লাব। শোনা গেল, আম্পায়ার কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে এ নিয়ে জবাবদিহি চাওয়া হতে পারে।

আম্পায়ারদেরও ছাড়া হচ্ছে না। মাঠের দুই আম্পায়ার, তৃতীয়, চতুর্থ আম্পায়ার ও ম্যাচ অবজার্ভার কেন শাকির হাবিব গাঁধীর আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা চলছে দেখেও তাঁকে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দিলেন, তৈরি করলেন বিতর্কের মঞ্চ, সেই প্রশ্ন উঠেছে। শোনা গেল, সংশ্লিষ্ট আম্পায়ারদের আর সেমিফাইনাল, ফাইনাল পর্যায়ের ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে না বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে লিগ ফাইনালের অশান্তিকে কেন্দ্র করে ডামাডোল চলছে।

2025-06-09T18:46:21Z